রহমতের মাস রমজান যাই যাই করছে। ইদ আসন্ন প্রায়। এ সময় সবার মনেই খুশির আমেজ, ঘরে ফেরার তাগিদ। পরিবারের প্রিয় মুখগুলোর সঙ্গে ইদের ছুটির দিনগুলো কাটবে আনন্দে, প্রচুর হৈ হুল্লোর, খাওয়া দাওয়া আর বেড়ানোর মধ্যে দিয়ে। তবে সব কিছুর ফাঁকে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে একটু নজর দিতে হবে। দৈনন্দিন রুটিন যেন লাগাম ছাড়া না হয় একেবারে।
ভ্রমণে সতর্কতা
ইদের এই সময়টাতে সড়ক পথে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হতে পারে। ট্রেনও যে ঠিক সময়ে আসবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। তাই ভ্রমণে নিন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ, ভ্রমণকালে যাত্রার সময় ও আপনার ওষুধ নেয়ার সময়ের সাথে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, সুই, পেন ডিভাইস বা মুখে খাবার ওষুধ নিতে ভুলবেন না। ডায়াবেটিস যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে বা বার বার ওঠানামা করে, তাহলে গ্লুকোমিটার সঙ্গে নিতে পারেন। বিমানে যাতায়াত করলে এগুলো লাগেজে না দিয়ে হ্যান্ডব্যাগে রাখুন। ভ্রমণের আগে সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাঁর ব্যবস্থাপত্র সঙ্গে রাখুন। জেনে নিন, যেখানে যাচ্ছেন, আপনার প্রয়োজনীয় সব ওষুধ সেখানে পাওয়া যায় কিনা। না গেলে আগেই কিনে নিন। নিয়মিত ওষুধ যেন কোনো ভাবেই বাদ না পড়ে। শুকনো খাবার, যেমন বিস্কুট, ক্র্যাকার্স, বাদাম বা শুকনো ফল, গ্লুকোজ সাথে রাখতে পারেন।
খাবার হোক স্বাস্থ্যসম্মত
উৎসবে অতি ভোজন হবে সেটাই স্বাভাবিক। ডায়াবেটিস রোগীরা সামাজিকতার বাইরে থাকবেন এমনটা নয়। তবে খেতে হবে নিজের অবস্থান বুঝে। এমনিতেই সারা মাস রোজা রেখে আমাদের পরিপাকের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যায় অনেকটা। এরপর ইদের দিন হুট করে বেশি খেয়ে ফেললে পরিপাক তন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়, ফলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
ইদের সময় ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি খাবার যেমন সেমাই, পায়েস একেবারেই খেতে পারবেন না, তা নয়। তবে অল্প খাবেন। সেই সাথে অন্য শর্করা জাতীয় খাবার কম খেয়ে এডজাস্ট করতে হবে। সকালের নাস্তায় রুটি, পরোটা, নুডুলস এই জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্লেইন পোলাও বা বিরিয়ানি খেতে পারবেন, তবে খেয়াল রাখতে হবে, এক প্লেট বিরিয়ানিতে ক্যালরি থাকে সম পরিমাণ ভাতের প্রায় তিনগুণ। তাই খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে, হিসেব করে। মাংস খান, তবে রেড মিট থেকে দূরে থাকুন। খেলেও চর্বিহীন মাংস, এক বা দুই টুকরা। মুরগি বা মাছের দিকে নজর দিন। সম্ভব হলে গ্রিলড চিকেন কিংবা ফিশ বার-বি-কিউ অতিথি আপ্যায়নে আনবে নতুন মাত্রা।
প্রতি বেলার খাবারে সবজি যেন অবশ্যই থাকে। রান্না করা কিংবা সালাদ। এছাড়াও পুদিনা পাতা, টক দই, বোরহানি হজমে সহায়তা করে। কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন। এই গরমে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে সারাদিনে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
এসময় বাজার ফলে ভরপুর। তবে বেশি মিষ্টি ফল, যেমন, আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, আঙ্গুর একটু বুঝে শুনে খেতে হবে। নিষেধ নয়, তবে পরিমাণ যেন হয় পরিমিত। টক বা কম মিষ্টি ফল খাওয়া যাবে। ফলের রসের বদলে গোটা ফল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।
নিয়মিত ব্যায়াম
ছুটির দিনগুলোতে সারা দিন শুয়ে বসে থেকে নষ্ট করবেন না। আলসেমিকে পাশ কাটিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ছুটির মধ্যেও। এ সময় প্রতিদিন সকালে কিংবা বিকেলে মিনিট বিশেকের মতো পার্কে বা বাড়ির ছাদে হাঁটা কিংবা জগিং করতে পারেন। এতে রক্তের সুগার আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বাড়ির অন্য সদস্যদের এই অভ্যাসে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন। যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন কিংবা জিমে যান, আলস্যের কারণে এ সময় সেটা বাদ দেওয়া উচিত হবে না। ছুটিতে সময় পেলে সাইক্লিং করতে পারেন কিংবা সাঁতার কাটতে পারেন, এতে টানা কয়েক দিনে আপনার শরীর মন হয়ে উঠবে ফুরফুরে।
অন্য সময়ের চেয়ে বেশি আলস্য দেখিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর অভ্যাস ইদের ছুটিতে আমাদের মধ্যে বেড়ে যায়। এই অভ্যাস আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সময় স্বাভাবিক ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস বজায় রাখুন। দুপুরের দিকে না ঘুমানোই শরীরের জন্য মঙ্গল। এছাড়া বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন, ল্যাপটপ কিংবা মুঠোফোনে সময় কাটানো উচিৎ নয়।
আনন্দের মাঝে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সকলের ইদ কাটুক সুস্বাস্থ্যে আর সুস্থতায়, সেই প্রত্যাশা।